ই-রিটার্ন পূরণে হিমশিম খাচ্ছেন? চিন্তা নেই!

আয়কর রিটার্ন দাখিল এখন অনেক সহজ হয়েছে অনলাইন পদ্ধতিতে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ই-রিটার্ন সিস্টেম চালু করেছে, যা ঘরে বসে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার সুযোগ দেয়। তবে প্রক্রিয়াটি ভালোভাবে বুঝে নিলে কাজ আরও সহজ হবে। নিচে ধাপে ধাপে আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়মাবলি তুলে ধরা হলো।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য নিম্নলিখিত কাগজপত্র প্রস্তুত রাখতে হবে:

  1. ইটিআইএন (eTIN): ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর।
  2. জাতীয় পরিচয়পত্র (NID): ফটোকপি।
  3. আগের বছরের রিটার্নের নথি।
  4. বিনিয়োগের বিবরণ: যেমন জীবন বীমা, সঞ্চয়পত্র।
  5. সম্পত্তি ও আয়ের উৎস সংক্রান্ত নথি।
  6. করমুক্ত আয়ের সার্টিফিকেট (যদি প্রযোজ্য)।

ধাপে ধাপে আয়কর রিটার্ন দাখিলের পদ্ধতি

ধাপ ১: ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন

প্রথমবার রিটার্ন দাখিল করতে হলে এনবিআরের ওয়েবসাইট এ নিবন্ধন করতে হবে:

  • ই-রিটার্ন সিস্টেমে গিয়ে “সাইন আপ” অপশনে ক্লিক করুন।
  • প্রথম বক্সে টিআইএন নম্বর, দ্বিতীয় বক্সে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর (শূন্য বাদ দিয়ে) লিখুন।
  • ক্যাপচা কোড দিয়ে “ভেরিফাই” ক্লিক করুন।
  • মোবাইলে আসা OTP কোড দিয়ে ফোন নম্বর নিশ্চিত করুন।
  • একটি পাসওয়ার্ড নির্ধারণ করে নিবন্ধন সম্পন্ন করুন।

ধাপ ২: ই-রিটার্ন সিস্টেমে লগ ইন

নিবন্ধন সম্পন্ন হলে টিআইএন, পাসওয়ার্ড এবং ক্যাপচা দিয়ে লগ ইন করুন।

  • ড্যাশবোর্ডের “রিটার্ন সাবমিশন” অপশনে ক্লিক করুন।
  • ধাপ ৩: কর যাচাইয়ের তথ্য

    • রিটার্ন স্কিম নির্বাচন করুন।
    • আয়ের সাল ও উৎস সঠিকভাবে উল্লেখ করুন।
    • করমুক্ত আয়ের পরিমাণ এবং রেসিডেন্ট স্ট্যাটাস পূরণ করুন।

    ধাপ ৪: আয়ের বিবরণ

    • “হেডস অফ ইনকাম” বিভাগে আয়ের উৎস (বেতন, ব্যবসা, কৃষি, মূলধন লাভ ইত্যাদি) উল্লেখ করুন।
    • কেবল বেতন আয় থাকলে “স্যালারি” সিলেক্ট করুন।
    • একাধিক আয়ের উৎস থাকলে “ইনকাম ফ্রম আদার সোর্সেস” নির্বাচন করুন।
    • “সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ” ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যান।

    ধাপ ৫: অতিরিক্ত তথ্য

    • প্রাথমিক আয়ের উৎসের স্থান (যেমন ঢাকা, চট্টগ্রাম) নির্বাচন করুন।
    • বিনিয়োগের করমুক্তি ও শেয়ারহোল্ডার পরিচালকের তথ্য দিন।
    • যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা বা প্রতিবন্ধী হলে তা উল্লেখ করুন।

    ধাপ ৬: আইটি ১০বি ফর্ম পূরণ

    • সম্পদের পরিমাণ ৫০ লাখ টাকার বেশি হলে এই ফর্ম পূরণ করুন।
    • বার্ষিক খরচের হিসাব অন্তর্ভুক্ত করুন।

    ধাপ ৭: বিনিয়োগ বিভাগ

    • জীবন বীমা, সঞ্চয়পত্র, ডিপিএস বা শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের বিস্তারিত তথ্য দিন।
    • ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণসহ জমার তথ্য পূরণ করুন।

    ধাপ ৮: ব্যয় বিভাগ

    • খাদ্য, বাসস্থান, পরিবহন, শিক্ষা ইত্যাদি খাতে ব্যয়ের বিবরণ দিন।
    • আয় ও ব্যয়ের হিসাব দেখুন।

    ধাপ ৯: কর ও পেমেন্ট

    • উৎস কর ও অগ্রিম কর প্রদানের তথ্য দিন।
    • করমুক্ত আয় হলে “শূন্য রিটার্ন” জমা দিতে পারবেন।

    ধাপ ১০: রিটার্ন সাবমিশন

    • “অনলাইন রিটার্ন” অপশনে ক্লিক করে রিটার্ন সাবমিট করুন।
    • জমা দেওয়ার আগে তথ্য যাচাই করতে পারেন।

    ধাপ ১১: রসিদ ডাউনলোড

    • জমা দেওয়ার পর একটি “অভিনন্দন বার্তা” দেখানো হবে।
    • রেফারেন্স আইডি ডাউনলোড করুন। এটি প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করুন।

    বিশেষ পরামর্শ

    1. যেকোনো তথ্য ভুল হলে সংশোধন করে জমা দিন।
    2. বিনিয়োগের ক্ষেত্রে করমুক্তি সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করুন।
    3. যদি নিজে না পারেন, কোনো পেশাদারের সাহায্য নিন।

    অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল সহজ ও সময় সাশ্রয়ী। তাই সময়মতো আপনার আয়কর রিটার্ন জমা দিয়ে আইনের প্রতি দায়িত্বশীল নাগরিকের ভূমিকা পালন করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *