‘কর জালে’ কোম্পানি পরিচালকের শেয়ার, বাড়ছে গেইন ট্যাক্সের সীমা

করের আওতায় আসছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকের আয়। তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকরা শেয়ার বিক্রি করে ‘এক টাকা’ আয় করলেও কর দিতে হবে। প্লেসমেন্ট শেয়ার, স্পন্সর শেয়ার ও ডিরেক্টর শেয়ার—এই তিন ধরনের শেয়ার থেকে পরিচালকদের যে আয় হবে, তার থেকে কর আদায় করা হবে। 

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এমন প্রস্তাবনা আসছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে।

অন্যদিকে আগামী বাজেটে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় গেইন ট্যাক্স আদায়ের সীমা ৫০ লাখ করা হচ্ছে। অর্থাৎ বিনিয়োগ করে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত মুনাফা করমুক্ত থাকছে।

এ বিষয়ে নাম না প্রকাশ শর্তে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিটি কোম্পানির পরিচালকের হাতে লাখ লাখ শেয়ার থাকে। সেখান থেকে তারাই বেশি আয় করেন। সেজন্য এবার তাদের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। শেয়ার বিক্রিতে যদি এক টাকা লাভ হয়, সাধারণ করদাতার মতো নিয়মিত হারে তাদের এই আয়ের উপর কর দিতে হবে। এতে কর আদায় বাড়বে, পুঁজিবাজারে বৈষম্য কিছুটা দূর হবে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।

২০১০ সালে পুঁজিবাজারে মহাধসের পর ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় আন্দোলনকারীরা কর সুবিধা দেওয়ার দাবি জানান। সে সময় সরকার পুঁজিবাজারে করছাড় সুবিধা দেওয়া শুরু করে।

এনবিআর সূত্রানুসারে, ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের সীমিত আকারে করছাড় সুবিধা দেওয়া হয়। পরে ২০১৫ সাল থেকে সুবিধা বাড়ানো হয়। ২০১৫ সালের বাজেটে করছাড় ও কর অব্যাহতি সুবিধা বাড়ানো হয়। করছাড় ও কর অব্যাহতি সুবিধা দিয়ে ওই বছরের ১৫ জুন প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। সেই সুবিধা চলতি অর্থবছর পর্যন্ত অর্থাৎ গত ৯ বছর ধরে অব্যাহত রাখা হয়।

ওই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অনুমোদিত কোনো স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত সরকারি সিকিউরিটিজ ব্যতীত অন্য কোনো সিকিউরিটিজের লেনদেনে করদাতাদের আয়ের উপর করছাড় সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে করছাড় সুবিধা দেওয়া হয়েছে তা হলো— কোম্পানি মর্যাদাভুক্ত এবং এর অধীন ফার্ম মর্যাদাভুক্ত করদাতার সিকিউরিটিজ লেনদেন হতে আয়ের উপর আয়কর হার ১০ শতাংশ করা হয়েছে।

একইসঙ্গে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্ট ব্যাংক, বিমা, লিজিং কোম্পানি, পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, স্টক ডিলার বা স্টক ব্রোকার কোম্পানির স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার বা শেয়ার ডিরেক্টরদের সিকিউরিটিজ লেনদেন থেকে আয়ের উপর করহার ৫ শতাংশ করা হয়।

কোম্পানিগুলোর স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার বা শেয়ারহোল্ডার ডিরেক্টর ব্যতীত স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত অন্যকোনো কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার, যাদের সংশ্লিষ্ট আয় বছরের যেকোনো সময়ে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি বা কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার রয়েছে, তাদের এই কোম্পানি বা কোম্পানিগুলোর সিকিউরিটিজ লেনদেন থেকে অর্জিত আয়ের উপর ৫ শতাংশ করা হয়েছে। ওই করদাতা ব্যতীত অন্যান্য করদাতাদের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সিকিউরিটিজ লেনদেন থেকে অর্জিত আয়ের উপর প্রদেয় আয়কর হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সুরক্ষায় বিশেষ করে সরকার করছাড় ও কর অব্যাহতি সুবিধা দিয়ে আসছে। কিন্তু ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা করছাড় ও অব্যাহতির কোনো সুবিধাই পাচ্ছেন না। সেজন্য আগামী বাজেটে ২০১৫ সালে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী করছাড় ও অব্যাহতি সুবিধা সীমিত বা বাতিল করা হচ্ছে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গেইন ট্যাক্স সীমা ৫০ লাখ টাকা করা হচ্ছে। অব্যাহতি সুবিধা বাতিল করতে আইএমএফ এনবিআরকে পরামর্শ দিয়েছে। সে অনুযায়ী শুধু সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুবিধা বাড়িয়ে বাকিদের সুবিধা প্রত্যাহার হচ্ছে।

তারা বলছেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন, পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে এনবিআর সব ধরনের সাপোর্ট দেবে। যেমন তালিকাভুক্ত কোম্পানির করছাড় সুবিধা, নতুন কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনতে আইপিও-তে কর সুবিধাসহ অন্যান্য ছাড় রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে অন্যান্য খাতের মতো আগামী অর্থবছরেও পুঁজিবাজার উন্নয়নে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুবিধা মিলবে।

@Source

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *