জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মাইক্রোবায়োলজিতে পড়াশোনা করেছেন মাহমুদুল আলম পলাশ। ৪৩তম বিসিএস কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। তাঁর ভাইভা অভিজ্ঞতা শুনেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন। ভাইভা হয়েছিল ২০২৩ সালের অক্টোবরে।
চেয়ারম্যান : তোমার নাম মাহমুদুল আলম পলাশ?
আমি : জি স্যার।
তোমাকে একটি গানের প্রথম লাইন বলব, তুমি দ্বিতীয় লাইন বলবে, ঠিক আছে?
—জি স্যার।
‘আমায় গেঁথে দাওনা মাগো?’
—পলাশ ফুলের মালা।
—স্যার, ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত।
তোমার ক্যাডার চয়েস লিস্ট কী?
—স্যার, বিসিএস শুল্ক ও আবগারি, কর, প্রশাসন ইত্যাদি।
বলো তো আমাদের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও কত?
—স্যার, ৮ শতাংশের মতো।
এটি কি ভালো, না খারাপ?
—স্যার, এটি বেশি ভালো না।
—স্যার, আমাদের টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশনধারীর সংখ্যা এক কোটির মতো হলেও আয়কর রিটার্ন জমা দেয় মাত্র ৩০ লাখের মতো মানুষ।
মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪-৫ শতাংশের মতো মানুষ ট্যাক্স রিটার্ন দিচ্ছে। বর্তমানে জীবনযাত্রার যেভাবে বা যতটা উন্নয়ন ঘটেছে, সে অনুযায়ী ট্যাক্স দেওয়ার হার বাড়েনি। ট্যাক্স বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমাদের নজরদারি বাড়াতে হবে, স্যার। আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী ট্যাক্সের ক্ষেত্রগুলো আরো বাড়াতে হবে, কর অঞ্চলগুলো আরো সম্প্রসারণ করতে হবে। বর্তমানে ৩৮ ধরনের সরকারি সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে ট্যাক্স রিটার্ন বাধ্যতামূলক—এটি যদি আরো বাড়ানো যেতে পারে, তাহলে স্যার ট্যাক্স প্রদানের হার অনেক বাড়বে।
এক্সটার্নাল ১ : আপনি তো বললেন, ট্যাক্স রিটার্ন দেওয়ার হার কম। আপনি দায়িত্ব পেলে কী ধরনের উদ্যোগ নেবেন?
—স্যার, আমার বাসার কাছে এক ঝালমুড়ি বিক্রেতার সঙ্গে কথা হয়েছিল। উনি প্রতিদিন চার-পাঁচ হাজার টাকার মুড়ি বিক্রি করেন। সেই হিসাবে উনার মাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকার মতো ইনকাম হয়, অথচ উনি কোনো ট্যাক্স দেন না। আমরা যদি এমন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের করের আওতায় আনতে পারি, তাহলে ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়বে।
তাঁদের কিভাবে করের আওতায় আনবেন?
—স্যার, এলাকার কাউন্সিলর বা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে যদি ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের তালিকা করা যায়, তাহলে করের আওতায় আনা সহজ হবে।
তাঁরা কেন কর দেবেন? কর দিলে তাঁরা কী কী সুযোগ-সুবিধা পাবেন? তাঁরা তো কর দিতে চাইলেও সহজে দিতে পারবেন না! কর দেওয়ার পদ্ধতি কি সহজ?
—জি স্যার, কর দেওয়ার পদ্ধতি খুব সহজ না। তবে এরই মধ্যে এক পাতার রিটার্ন জমা দেওয়ার পদ্ধতি চালু হয়েছে। এ রকম আরো সহজ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
চেয়ারম্যান : রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে, এটা সেই এলাকার জন্য কতটা বিপজ্জনক বা ঝুঁকিপূর্ণ?
—স্যার, এটি আসলে একদমই ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কারণ আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি মেনেই হচ্ছে এটি। এ ছাড়া এখানে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাবলয় রয়েছে। ভূমিকম্প, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বা বন্যা এবং বিমান দুর্ঘটনা থেকেও এই বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে।
এক্সটার্নাল-২ : আপনি বোঁথর গ্রাম চেনেন?
—জি স্যার, চিনি।
ওখানে যে চড়কপূজা ও মেলা হয়। গিয়েছেন বা দেখেছেন কখনো?
—জি স্যার, দেখেছি।
আপনি কাস্টমসে আসতে চান। বলুন, অ্যান্টিডাম্পিং কী?
—স্যার, বাজারমূল্যের চেয়ে কম মূল্যে কোনো দেশে পণ্য রপ্তানি করাকেই ডাম্পিং বলে। এটি সাধারণত করা হয় ওই সংশ্লিষ্ট দেশের বাজার ধরার জন্য এবং এতে ওই দেশের দেশীয় শিল্প ক্ষতির শিকার হয়। আর এই দেশীয় শিল্পকে বাঁচানোর জন্য যখন ওই সংশ্লিষ্ট দেশ আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক বা ট্যারিফ আরোপ করে, তখন সেটিকে বলা হয় অ্যান্টিডাম্পিং।
চেয়ারম্যান : ওকে, তুমি আসতে পারো।
সূত্র : কালের কন্ঠ