কর রেয়াত বলতে কর কমানো বা কর কম দেয়াকে বোঝায়। বিনিয়োগ বা দান হল কর রেয়াতের বৈধ উপায়।
প্রতি বছর জুলাই থেকে পরের বছরের জুন পর্যন্ত এই ১২ মাসের আয়ের ওপর কর বসে। এই সময়ের ৩০শে জুনের মধ্যে বিনিয়োগ করলে কর রেয়াত পাওয়া যায়।জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অনুমোদিত নির্ধারিত কয়েকটি খাতে বিনিয়োগ এবং দানে উৎসাহিত করার জন্য সরকার ওই সমস্ত বিনিয়োগ এবং দানের উপর এই ছাড় দিয়ে থাকে। যার মাধ্যমে করের পরিমাণ বহুলাংশে কমানো যায়।
একজন নাগরিকের মোট আয়ের ২০% বিনিয়োগ করা যাবে এবং বিনিয়োগের ১৫% পর্যন্ত রেয়াত ভোগ করা যাবে – বিনিয়োগ জনিত কর রেয়াত ২০২৪।
আয়কর আইন, ২০২৩ । আয়কর নির্দেশিকা অনুসারে একজন করদাতার বিনিয়োগ ও দানের খাতগুলো হল,
জীবন বীমার প্রিমিয়াম ক্ষেত্রে কর রেয়াতের সর্বোচ্চ সীমা পলিসি মূল্যের ১০ শতাংশ পর্যন্ত।
সরকারি কর্মকর্তার প্রভিডেন্ট ফান্ডে চাঁদা।
স্বীকৃত ভবিষ্যৎ তহবিলে নিয়োগকর্তা ও কর্মকর্তার চাঁদা।
কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠী বীমা তহবিলে চাঁদা।
সুপার এনুয়েশন ফান্ডে প্রদত্ত চাঁদা।
যেকোনো তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট পেনশন স্কিমে বার্ষিক সর্বোচ্চ এক লাখ ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ।
যেকোনো সিকিউরিটিজ ক্রয়ে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ।
বাংলাদেশের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার।
স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চারে বিনিয়োগ।
বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ।
জাতির জনকের স্মৃতি রক্ষার্থে নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে অনুদান।
যাকাত তহবিলে দান।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত কোনো দাতব্য হাসপাতালে দান। এরমধ্যে রয়েছে: আহসানিয়া ক্যান্সার হাসপাতাল, আইসিডিডিআরবি, সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র ‘সিআরপি’, ঢাকা আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতাল।
এছাড়া প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানে, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের কোনো প্রতিষ্ঠান, আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কে, সরকার অনুমোদিত জনকল্যাণমূলক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশে দান কর রেয়াতের আওতায় পড়বে।
তবে এরমধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত পাঁচটি বিনিয়োগ খাত হল: জীবন বীমা, ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, প্রভিডেন্ট ফান্ড, শেয়ার ও ট্রেজারি বন্ড।
একজন করদাতা তার মোট করযোগ্য আয়ের ২০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারবেন।
ওই বিনিয়োগকৃত অর্থের ১৫% কর রেয়াত পাবেন। অর্থাৎ সেই পরিমাণ টাকা প্রদত্ত ট্যাক্স থেকে বাদ যাবে।
এখন ওই ব্যক্তির করযোগ্য আয় যেহেতু ১০ লাখ টাকা তাহলে তিনি বিনিয়োগ করতে পারবেন তার এই আয়ের ২০% বা দুই লাখ টাকা।
তিনি পুরো দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে তার ১৫% অর্থাৎ ৩০ হাজার টাকা কর রেয়াত পাবেন।
সে হিসেবে ওই ব্যক্তির প্রযোজ্য মোট কর ৭২ হাজার পাঁচশ টাকা থেকে এই ৩০ হাজার টাকা রেয়াত পাবেন।
এক্ষেত্রে তার করের পরিমাণ কমে ৪২ হাজার ৫০০ হাজার টাকায় দাঁড়াবে।
আয়কর নির্দেশিকা অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত কর রেয়াতের সুযোগ নেওয়া যাবে।
সে হিসেবে ১০ লাখ টাকা অথবা মোট করযোগ্য আয়ের তিন শতাংশ অথবা মোট প্রকৃত বিনিয়োগের ১৫% – এই তিন এর মধ্যে যেটি ছোট সেটি তার জন্য কর রেয়াত, যা তার মোট প্রদেয় আয়কর থেকে বাদ যাবে।
তবে, এই শর্ত শুধুমাত্র পুরনো করদাতা অর্থাৎ, যিনি এর আগে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে।বিনিয়োগের এই তথ্য বার্ষিক আয়–ব্যয়ের বিবরণী বা রিটার্ন জমার দেয়ার সময়সীমার মধ্যে জমা দিলে কর ছাড় পাওয়া যাবে।
চলতি বছর কত শতাংশ আয়কর রেয়াত পাওয়া যাবে?
আয়কর নির্দেশিকা ২০২৩-২৪ অনুসারে নির্ধারিত সময় ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করলেই ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কর রেয়াত মিলবে। আর এই শর্ত শুধু পুরনো করদাতা, যিনি এর আগে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন তাঁর জন্য প্রযোজ্য হবে। তবে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ বা দান করে কর রেয়াতের সুযোগ নেওয়া যাবে।
কত টাকা আয় হলে আয়কর দিতে হবে?
প্রথম ৩.৫ লক্ষ টাকার উপর শুন্য, পরবর্তী ১ লক্ষ টাকার উপর ৫% এবং পরবর্তী ৪ লক্ষ টাকার উপর ১০% , পরবর্তী ৫ লক্ষ টাকার উপর ১৫% এবং পরবর্তী ৫ লক্ষ টাকার উপর ২০% কর প্রযোজ্য। পরবর্তী ২০,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর ২৫% অবশিষ্ট মোট আয়ের উপর ৩০% আয়কর দিতে হবে। তবে, উল্লিখিত করহার করদাতার মর্যাদা নির্বিশেষে সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সকল প্রকার তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারক করদাতার উক্ত ব্যবসা হতে অর্জিত আয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। তাছাড়া, তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা, মহিলা করদাতা, ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি (person with disability) করদাতা এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত সীমা নিম্নরূপ : ১. মহিলা করদাতা এবং ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতার ক্ষেত্রে ৪,০০,০০০ টাকা; ২. তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে ৪,৭৫,০০০ টাকা; ৩. গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার ক্ষেত্রে ৫,০০,০০০ টাকা।
আপনারা এই সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে অথবা ইনকাম ট্যাক্স সংক্রান্ত মামলা পরিচালনা, ট্যাক্স প্লানিং কিংবা ট্যাক্স, ভ্যাট এর যে কোন প্রয়োজনে কথা বলুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সনদপ্রাপ্ত ট্যাক্স স্পেশালিষ্ট এর সাথে।
বিজয় কর্মকার
আয়কর আইনজীবী
01916552766